২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৫৪১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একইসঙ্গে প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি গাজা উপত্যকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, যা ৭ অক্টোবর-পূর্ব গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬ শতাংশ। রোববার (৩১ ডিসেম্বর) ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন ৪৫১তম দিনে গড়িয়েছে। এদিনও গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৫৪১ জনে।
ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (পিসিবিএস) এমন তথ্য জানিয়েছে। পিসিবিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন ও গণহত্যার ফলে গাজার জনসংখ্যা প্রায় ৬ শতাংশ কমে গেছে। প্রতিবেদনে চলমান হত্যাযজ্ঞ এবং বাস্তুচ্যুতিকে এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওলা আওয়াদ জানান, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৫ হাজার ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং ১ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে পর থেকে গাজা ত্যাগ করেছে।
ওলা আওয়াদ জানান, নিহতদের মধ্যে ১৭ হাজার ৫৮১ জনই শিশু এবং ১২ হাজার ৪৮ নারী রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার আহত এবং প্রায় ১১ হাজার জন নিখোঁজ রয়েছে। তবে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৮ হাজার ৪০০ জনের বেশি। নিহতদের মধ্যে শিশু ১৮ হাজার ৮৫৮ জন এবং নারী ১১ হাজার ৯৪৬ জন।
পিসিবিএসের অনুমান অনুযায়ী, ফিলিস্তিনিদের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৫ মিলিয়ন, যার মধ্যে গাজা ও পশ্চিম তীরে ৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন, ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন ইসরায়েলের অভ্যন্তরে এবং বাকিরা বিশ্বে বিভিন্ন দেশে বসবাস করছে।
এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট মনিটর জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন কেবল মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়নি, সেখানকার মানুষের শেষ আশ্রয় এমনকি গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গও কেড়ে নিয়েছে। ইসরায়েলি হামলা গাজাকে স্রেফ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এসব ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১১ হাজারের বেশি মানুষ চাপা পড়ে গেছেন। এই সংখ্যাকে নিখোঁজ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এদিকে, কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে অঞ্চলটির অবকাঠামোর কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে—গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস থেকে প্রকাশিত পরিসংখ্যান ও অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের পরে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাতে ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ১০ হাজার তাঁবু নষ্ট হয়ে গেছে এবং আর ব্যবহারের উপযোগী নয়।
ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজার ১৩৫টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস এবং ৩৫৩টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭৫৬ জন শিক্ষক ও শিক্ষা-কর্মী নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন বিষয়ের ১৪৮ জন স্কলার, শিক্ষাবিদ, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও গবেষক নিহত হয়েছেন ইসরায়েলি হামলায়।
এ ছাড়া, ইসরায়েলের নির্বিচার আগ্রাসনে গাজার ৮২৩টি মসজিদ ধ্বংস এবং ১৫৮টি মসজিদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চার্চ ধ্বংস হয়েছে ৩ টি। ৬০টি কবরস্থানের ১৯টিই পুরোপুরি বা আংশিক ধ্বংস হয়েছে। পাশাপাশি ২ হাজার ৩০০ জনের মরদেহ ইসরায়েলিরা কবরস্থান থেকে চুরি করে নিয়ে গেছে।
আবাসিক এলাকায়ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েলি। দখলদার বাহিনীর হামলায় গাজায় ১ লাখ ৬১ হাজার ৬০০টি আবাসিক ইউনিট ধ্বংস হয়েছে এবং ৮২ হাজার আবাসিক ইউনিট বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর বাইরে, গাজার ৩৪টি হাসপাতাল ব্যবহার অনুপযোগী এবং ৮০টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে ইসরায়েলি হামলার কারণে।